বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে, গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করেছে। তবুও, দেশের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। স্বাধীনতার পর আজ প্রায় ৫৪ বছর অতিবাহিত হলেও প্রবাসে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার এখনো নিশ্চিত করা যায়নি, যা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। প্রবাসীদের ভোটাধিকার একটি যৌক্তিক দাবি, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।
ভোটাধিকার একটি সাংবিধানিক ও মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। একজন নাগরিক বিদেশে থাকলেও তাঁর এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। গণতন্ত্র মানেই জনগণের শাসন, এবং এর মধ্যে প্রবাসীরাও অন্তর্ভুক্ত। প্রযুক্তির বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের এর সময়ে এসে খুব সহজেই প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করা যায় বলে আমরা মনে করি। এর জন্য শুধু প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি ও যথাযথ উদ্যোগ।
প্রবাসীরা দেশের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। তাঁদের এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলে দেশের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা আরও বাড়বে এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। শুধু সরকার নির্বাচনে নয় বরং তাঁদের নিয়ে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য সুব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। প্রবাসীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাঁদের মতামত থাকা প্রয়োজন। ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন, যিনি তাঁদের অধিকার ও সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবেন আবার ভোটাধিকারের মাধ্যমে তারা তাঁদের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধ্বান্তে মতামত দিতে পারবেন।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির সহায়তায় ভোটাধিকার নিশ্চিত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবাসীদের জন্য অনলাইন বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। এতে করে দূতাবাসের মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ অনলাইন ভোটিং প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব।
ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেমন—প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরি করা, দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ইস্যু করার প্রক্রিয়া দ্রুত করা হলে এই দাবি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এখন আর কেবল একটি দাবি নয়, এটি সময়ের প্রয়োজন। এটি শুধু তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে না, বরং দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও অংশগ্রহণমূলক করবে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে থাকলেও তাঁদের মন পড়ে থাকে দেশেই। তাঁদের এই অধিকার নিশ্চিত করা হলে তাঁরা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের উচিত, দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের এই দাবিকে বাস্তব রূপ দেওয়া।