কখনো ভেবে দেখেছেন কি গুগল ম্যাপ কিভাবে যানে যে রাস্তায় এখন ট্রাফিক জ্যাম বেশি না কম? অনেকেই হয়তো ভাবে গুগল মনে হয় স্যাটেলাইট দিয়ে সার্বক্ষনিক আকাশ থেকে রাস্তা ঘাট পর্যবেক্ষন করে চলেছে। কিন্তু তাই যদি হয় তবে এত এত রাস্তা-ঘাট পর্যবেক্ষন করার জন্য কত সংখ্যক স্যাটেলাইট প্রয়োজন হতে পারে তা একবার ভেবে দেখেছেন কি?
একই প্রশ্ন তাড়া করে ফেরে সিমন ওয়েকোর্ট নামক এক জার্মান নাগরিককে। এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে তিনি যা পেলেন তা আসলে অবাক করার মত বৈকি। প্রযুক্তির দুনিয়ায় কখনো কখনো বিচিত্র উপায়ে ঘটানো যায় আলোড়ন। জার্মানির বাসিন্দা সিমন ওয়েকার্ট এমনই এক অভিনব পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন—গুগল ম্যাপের লাইভ ট্র্যাফিক সিস্টেম কতটা নির্ভরযোগ্য অথবা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
২০২০ সালে, তিনি বার্লিন শহরের ব্যস্ত রাস্তার উপর একটি হাত-টানা লাল কার্টে ৯৯টি পুরনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন সাজিয়ে তা টেনে নিয়ে যান। আশ্চর্যের বিষয় হল, গুগল ম্যাপ এই ফোনগুলোকে আলাদা আলাদা যানবাহন হিসেবে ভেবে নেয়। ফলে বাস্তবে ফাঁকা রাস্তাকে লাইভ ট্র্যাফিক ম্যাপে তীব্র যানজট হিসেবে প্রদর্শন করতে থাকে! মানে গিয়ে দাঁড়ালো গুগল ম্যাপ আসলে হিসেব করে দেখে একটি রাস্তায় কতগুলো গুগলের সুবিধাযুক্ত ফোন আছে। তারপর সেই ফোনগুলো কতটা ঘন সন্নিবেশিত আছে আর ফোনগুলোর গতিবিধি পরিমাপ করে গুগল ম্যাপ একটি ধারণা করে নেয় ঐ রাস্তায় এসময় কতগুলো যানবাহন থাকতে পারে। এই তথ্যের সাথে গুগল ম্যাপের ডেটাবেজে সংশ্লিষ্ট রাস্তার একটি হিস্টরিও থাকে। এসব কিছু পর্যালোচনা করে গুগল ম্যাপ তার ব্যাবহারকারীকে একটি আনুমানিক তথ্য সরবরাহ করে।
আমি গুগলের অ্যালগরিদমকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছিলাম—মানুষ নাকি মেশিন, বাস্তবতা নাকি ডেটা, কোনটা বেশি নির্ভরযোগ্য?
সিমন ওয়েকার্ট
সিমনের এই পরীক্ষার ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশিত হলে তা ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। প্রযুক্তিবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা এ থেকে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন—কীভাবে অ্যালগরিদম-নির্ভর সিস্টেম অনেক সময় পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তবে গুগল এ বিষয়ে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না জানালেও, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ঘটনা সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হয়।