রবিবার, ১০ই আগস্ট, ২০২৫   |   ২৬শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। সম্প্রতি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা এই সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) এবং পর্তুগালের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা (AICEP) এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। বানিজ্য বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন এই চুক্তি উভয় দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঐতিহাসিকভাবেই পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৬শ শতকে পর্তুগিজরা প্রথম বাংলাদেশে আসে মূলত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ এই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্য খাত উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে। একসময় ২৫-৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সীমাবদ্ধ থাকা বাণিজ্য বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এককভাবে পর্তুগালে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজারমান প্রায় ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ প্রধানত ওভেন গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, হিমায়িত মাছ, শুকনো খাবার, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, প্লাস্টিক এবং সিরামিক পণ্য পর্তুগালে রপ্তানি করে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ালটনের মতো বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান পর্তুগালের বাজারে তাদের টেলিভিশন রপ্তানি শুরু করেছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি বৈচিত্র্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মূলত, পোশাক শিল্পই পর্তুগালে বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগ দখল করে আছে। রপ্তানিকৃত পোশাকের মধ্যে প্রায় ৯০%ই ফ্যাশন পোশাক।

আমদানি চিত্র:

পর্তুগাল থেকে বাংলাদেশে প্রধানত প্রক্রিয়াজাত খাবার, রাসায়নিক পণ্য এবং তেলজাত সামগ্রী আমদানি করা হয়। যদিও রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ কম, তবে উভয় দেশই বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রেখে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার দিকে নজর দিচ্ছে।

সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:

পর্তুগালে বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল বাজার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে স্পেন সীমান্তের মাধ্যমে পণ্য প্রবেশ করালে ২৬% শুল্ক এড়ানো যায়, যা রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় সুবিধা। এছাড়াও চামড়া, সিরামিক এবং অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি পর্তুগালে বসবাস করছেন, যার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করেন। এই বৃহৎ প্রবাসী জনগোষ্ঠীও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন।

তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেমন ঢাকায় পর্তুগালের দূতাবাস না থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল। আশার বিষয় হল, পর্তুগিজ সরকার ভবিষ্যতে ঢাকায় একটি স্থায়ী দূতাবাস খোলার বিষয়টি বিবেচনা করছে, যা বাণিজ্য ও অন্যান্য সম্পর্ককে আরও সহজ করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ইপিবি এবং এআইসিইপি উভয় দেশেই সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি মেলা, সিম্পোজিয়াম এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজনেও তারা একে অপরকে সহায়তা করবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় সংস্থা শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা যাচাই করতে ব্যবসায়িক মিশন পাঠানোর সুবিধা দেবে, যা ভবিষ্যতে পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

শেয়ার
মতামত দিন...

Exit mobile version