রবিবার, ১০ই আগস্ট, ২০২৫   |   ২৬শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্মার্টফোন আমাদের আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে আমরা ফোনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই নির্ভরতা কি আমাদের মন ও শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? বিভিন্ন সময়ে করা অনেকগুলো গবেষণা থেকে প্রমানিত হয়েছে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যাবহার আমাদের শরীর ও মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে মাত্র একদিন ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা বা ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ হতে পারে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সৃজনশীলতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ডিজিটাল ডিটক্স কী?

ডিজিটাল ডিটক্স বলতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকা বোঝায়। এর উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাস্তব জীবনে মনোযোগ দেওয়া এবং মানসিক চাপ কমানো।

বৈজ্ঞানিক উপকারিতা:

  • মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: ডিজিটাল ডিভাইস, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা এক ধরনের আসক্তি তৈরি করে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। সপ্তাহে একদিন ডিজিটাল ডিটক্সের ফলে মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমে, যা মানসিক শান্তি বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। গবেষণা থেকে জানা যায়, ডিজিটাল ডিটক্স উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মাত্রা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
  • ঘুমের মান বৃদ্ধি: ফোনের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়। মেলাটনিন ঘুমের জন্য অপরিহার্য। ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করলে ঘুম দেরিতে আসে এবং ঘুমের গুণগত মান খারাপ হয়। ডিজিটাল ডিটক্সের ফলে ঘুমের সমস্যা কমে এবং ঘুম গভীর ও প্রশান্ত হয়।
  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: একটানা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ওপর চাপ পড়ে, যা শুষ্ক চোখ, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া এবং মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। ডিজিটাল ডিটক্সের সময় চোখ বিশ্রাম পায় এবং চোখের ওপর চাপ কমে।
  • শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি: ফোনের প্রতি আসক্তি আমাদের অলস করে তোলে। ডিজিটাল ডিটক্সের ফলে আমাদের হাতে বাড়তি সময় থাকে, যা আমরা শারীরিক কার্যকলাপে ব্যয় করতে পারি। বাইরে হাঁটতে যাওয়া, খেলাধুলা করা বা অন্য কোনো শারীরিক ব্যায়াম শরীরকে সতেজ রাখে।
  • সম্পর্কের উন্নতি: ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে অনেক সময় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাথে গুণগত সময় কাটানো হয় না। ডিজিটাল ডিটক্সের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সাথে সরাসরি কথোপকথনের পরিমাণ বাড়ে যা পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: যখন আমরা ফোন থেকে দূরে থাকি, তখন মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমে। ক্রমাগত তথ্য প্রকৃয়াজাত করা থেকে মস্তিষ্ক সাময়িক বিরতি পায়। এতে করে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ডিজিটাল ডিটক্স সৃজনশীল চিন্তাভাবনাকেও উৎসাহিত করে এবং সমস্যার সমাধানে নতুন পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
  • উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয় এবং কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। সপ্তাহে একদিন ফোন থেকে দূরে থাকার ফলে একই সময়ে একাধিক কাজ করার প্রবণতা কমে এবং একটি নির্দিষ্ট কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়, যা উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।

কিভাবে শুরু করবেন?

সপ্তাহে একদিন ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করা কঠিন মনে হতে পারে, তবে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি সম্ভব। প্রথম দিকে সাপ্তাহে একদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করুন। তারপর ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে থাকুন। ডিটক্স করার সময়টুকু আপনি কাগজের বই পড়তে পারেন, প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারেন, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারেন অথবা নতুন কোনো শখের কাজ করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ডিজিটাল ডিটক্স আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এটি শুধুমাত্র আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে না, বরং পুরোনো সম্পর্ক উন্নয়ন, নতুন সম্পর্ক গড়া, অনুভূতির প্রখরতা বৃদ্ধি করে জীবনের মান উন্নয়ন করতে সহায়তা করে।

শেয়ার
মতামত দিন...

Exit mobile version