রবিবার, ১০ই আগস্ট, ২০২৫   |   ২৬শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও অবরোধের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র অভাবে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন, এবং একই দিনে অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১০ জন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে, যার বেশিরভাগই গত কয়েক সপ্তাহে ঘটেছে। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় নিহত ১০০ জনের মধ্যে ৩৪ জন মানবিক সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই হামলাগুলো আবারও প্রমাণ করছে যে, খাদ্য ও ওষুধ সংগ্রহ করতে যাওয়াও গাজায় এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় মৃত্যুবরণ করা শিশুদের মধ্যে ২১ জনের বয়স ছিল পাঁচ বছরের নিচে। সংস্থাটির মতে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন কোনো খাদ্যসামগ্রী প্রবেশ করতে না পারায় অপুষ্টি ও অনাহার চরম আকার ধারণ করে।

মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে…

গাজায় এখন গণ-অনাহারের পরিস্থিতি চলছে

তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, গাজার সীমান্তের বাইরে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি ও ওষুধ মজুদ থাকলেও সেগুলো যথাযথভাবে প্রবেশ করানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে লাখো মানুষ ক্ষুধায় ধুঁকছে।

জাতিসংঘের মতে, গাজায় সংঘাতে ১১,০০০ এর বেশি বেসামরিক জনগণের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করা বিভিন্ন সূত্রে জানিয়েছে প্রকৃত সংখ্যা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এদিকে জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে, ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আশেপাশের এলাকাগুলো পুরো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। খাদ্য ও পানির অভাব তীব্র, এবং যুদ্ধ থেকে আশ্রয় নেওয়ার কোনোও নিরাপদ জায়গা নেই।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন মানবিক সংস্থা বারবার গাজায় পূর্ণাঙ্গ মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানালেও ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধ ও হামলার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত এই পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গাজায় এক ভয়াবহ মানবতাবিরোধী বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

শেয়ার
মতামত দিন...

Exit mobile version